স্টাফ রিপোর্টার
একদা ঈদের মতো উৎসবগুলো রাঙা কাগজ, পাটের সুতা আর আঠায় ভর করে রঙিন করার চেষ্টা করা হতো পাড়া-মহল্লা। সে সময়ে দর্জির দোকানে তৈরী জামাকাপড়ের চাহিদা ছিলো বেশী। তৈরী পোশাক কিছু থাকলেও তা খুব কম মানুষ কিনতো। ছোট বাঁশিতে লাগানো বেলুনে ফুঁ দিলে ফুলে উঠতো আর ছেড়ে দিলে শব্দ করতো। পে-পো শব্দ হলেও এখনকার মতো কান ফাটানো ঢাউস সাউন্ড বক্স কিংবা ডিজে পার্টি যন্ত্রনা ছিলোনা। অনেকের মতে, সে সময়ে ঈদে এত খরচও করতো না মানুষ।
চাঁদ উঠলে আগামীকাল ঈদ। নয়তো পরশু সারা দেশে ঈদ উল ফিতর পালিত হবে। যদিও দেশের কোন কোন এলাকায় সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে একদিন আগেই ঈদ উদযাপন করে কেউ কেউ। বাংলা নববর্ষের বেলায়ও অনেকে ভারতের সাথে মিল রেখে পালন করে। প্রবীণরা জানান, অতীতে ঈদে পাড়া-মহল্লায় যুবা-কিশোররা রঙিন কাগজ দিয়ে নিশান তৈরী করে রশিতে আঠা দিয়ে লাগাতো। তারপর তা ঝুলিয়ে দেয়া হতো সড়কে। এছাড়া গেট তৈরী করা হতো বাঁশ , কাগজ দিয়ে কিংবা পাতা দিয়ে। ঈদের আগে রমজান মাস এলেই এলাকার যুবক-কিশোররা দায়িত্ববান হয়ে উঠতেন। সেহরীর সময়ে রোজাদারদের ডেকে তোলার কাজ করতেন আনন্দ মনে। ওই সময়ে নারায়ণগঞ্জ শহরের আশপাশের অনেক এলাকায় বিদ্যুত ছিলো না। যে কারনে মসজিদে মাইক ব্যবহার হতো না। আমিনুল ইসলাম স্বপন নামের এক ব্যক্তি জানান, টিনের তৈরী বোঙা দিয়ে আমরা দল বেধে ডাকতাম। তখনকার দিনে এলার্ণ দেয়া টেবিল ঘড়িও সবার বাড়িতে ছিলো না। এখন সেহরীর ডাক না দিলেও চলে। ঘরে ঘরে হাতে হাতে মোবাইল ফোন রয়েছে আর মোবাইলে এলার্ণ দেয়ার সুবিধা রয়েছে। এরপরও কোথাও কোথাও সেহরীর ডাকের নামে চাঁদাবাজি হয় বলে শোনা যায়। না ডেকেই এক শ্রেনীর নেশাখোররা রসিদ ছেপে শহরের ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে হানা দেয় চাঁদার জন্য।
ফারুক আহমেদ নামের এক ব্যবসায়ী জানান, আমাদের বাল্যকালে ঈদের অনেক আগেই গজ কাপড় কেনা হতো। এরপর তা দর্জির দোকানে দেয়া হতো তৈরী করতে। বাড়ির কাছে দর্জির দোকান হলে প্রতিদিন বন্ধু বান্ধব নিয়ে ঢু মারতাম। দেখতাম জামা তৈরী হয়েছে কি-না। দর্জিরা যে জামা তৈরী করে তা ঝুলিয়ে রাখতো। এক সময়ে যখন নিজের জামা ঝুলানো দেখতাম তখনই আনন্দে নেচে নেচে বাড়িতে এসে বাবা-মাকে বলতাম। ওই সময়ে রেডিমেট পোশাক তেমন পাওয়া যেতো না। শহরের টানবাজার এলাকায় ও পরে ডিআইটি এলাকায় মার্কেট হলে তৈরী পোশাকের দেখা মিলে।
অনেকের মতে, সে সময়ে ঈদে সবাই খরচ করতো না। এখনকার মতো দেখাদেখি খরচের সামর্থ্যও ছিলো না অনেক মানুষের। এক দশকের বেশী সময় ধরে সর্বত্র মার্কেট আর দোকানে ভরে গেছে। আগে হাতে গোণা কয়েকটি ব্র্যান্ড থাকলেও এখন তার সংখ্যাও বাড়ছে। নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া থেকে শুরু করে ডিআইটি এলাকা পর্যন্ত, ফ্রেন্ডস মার্কেট আরম্ভ করে রেলস্টেশন এলাকায় গড়ে উঠেছে অনেক বিপণী বিতান আর দোকান। গার্মেন্টস শিল্পের প্রসারে এ অঞ্চলে মানুষের সংখ্যাও আগের তুলনায় বেড়েছে। গ্রাম থেকে আসা অসংখ্য মানুষ গার্মেন্টসসহ শিল্প কারখানায় কাজ করে। গ্রামে খুব একটা টাকার মুখ না দেখলেও শহরে এসে মাস শেষে নগদ টাকা পান। এই শ্রেনীর মানুষজনকে টার্গেট করে শহরে বিপণী বিতানগুলো সাজানো হয়। সারা বছর মোটামুটি বিক্রি করলেও ঈদ বা বিভিন্ন উৎসবে তারা গলাকাটা দামে পণ্য বিক্রি করে বলে অভিযোগ রয়েছে। যে পণ্যের দাম ১ হাজার টাকা তার দাম হাকে ৪ হাজার টাকা। এই পণ্য কারও কাছে ১ হাজার আবার কারও কাছে ২ হাজারে বিক্রি করে। বিশ্লেষকদের মতে, এখন উৎসব মানেই খরচ আর খরচ। গরীব মানুষজন সারা বছর যা সঞ্চয় করে উৎসবে তা খরচ করে ফেলে। এটা অনেকটা কর্পোরেট কৌশল বলে মনে করেন তারা।